
সাইফুদ্দীন আল মোবারক, টেকনাফ: দীর্ঘদিন ধরে মায়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহগোষ্ঠী আরাকান আর্মি রাখাইনের কিছু রাজ্য দখলে নেওয়ার পর থেকে সেখানে খাদ্য সংকট শুরু হয়েছে। এই সুযোগে কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের কিছু পাচারকারী চক্র নানা কৌশলে নিত্যপণ্য মায়ানমারে পাচার করছে আর মায়ানমার থেকে নিয়ে আসছে ইয়াবাসহ বিভিন্ন প্রকারের মাদক। এতে করে টেকনাফে ভোজ্যতেলসহ নানা খাদ্য পণ্যের দাম বেড়েছে এবং মাদকেরও ছড়াছড়ি হচ্ছে।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে মায়ানমারে পাচার হচ্ছে ব্যাপক খাদ্যপণ্য। বিশেষ করে পবিত্র রমজানের শুরুতে রাখাইনে ভোজ্যতেল, মুড়ি, পেঁয়াজ-রসুন, চিনি, পানীয় পণ্যসহ অন্যান্য খাদ্যপণ্যের চাহিদা বেশ বেড়ে গেছে। ইউরিয়া সার, সিমেন্টসহ গৃহসজ্জার সরঞ্জামও পাচার হচ্ছে মায়ানমারে।
কেবলমাত্র খাদ্য পণ্য নয়,পেট্রল-অকটেনসহ হাজার হাজার লিটার বিভিন্ন জ্বালানি তেলও পাচার করা হচ্ছে মায়ানমারে। এতে জড়িত রয়েছে শক্তিশালী পাচারকারী সিন্ডিকেট। জড়িত রয়েছে অসাধু কিছু দোকানদাররাও।
বিজিবি ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে হোয়াইক্যংয়ের কাটাখালী, উলুবনিয়া, খারাইঙ্গাঘোনা, লম্বাবিল, উনচিপ্রাং, ঝিমংখালী, খারাংখালী, হ্নীলা ইউপির মৌলভীবাজার পূর্বপাড়া,ওয়াব্রাং, লেদা, বরইতলী, বাহারছড়া ইউপির কচ্ছপিয়া, নোয়াখালীপাড়া, সাবরাং ইউপির মাঝের পাড়া, ডাঙ্গর পাড়া, দক্ষিণপাড়া, টেকনাফ পৌরসভার চৌধুরী পাড়ার ট্রানজিট জেটি ঘাট, নাইটংপাড়া,দক্ষিণ জালিয়াপাড়া, খায়ুকখালী খালসহ বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে প্রতিরাতে মায়ানমারে পাচার হচ্ছে হাজার হাজার টন খাদ্যপণ্যসহ নানা সামগ্রী। টেকনাফ উপজেলার কিছু অসাধুচক্র নির্বিঘ্নে পাচারযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না এসব চোরাকারবারীদের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হ্নীলা ইউনিয়নের ওয়াব্রাং এলাকার এক ব্যক্তি জানান, রাতে নাফ নদী দিয়ে আমাদের এলাকা থেকে মায়ানমারে বিভিন্ন পণ্য যায়। আর মায়ানমার থেকে আসে মাদক, ইয়াবা,ক্রিস্টাল মেথ আইস। রাতের আঁধারে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে জমজমাটভাবে নানান পণ্য পাচার করছে চোরাকারবারিরা।
স্থানীয়দের ভাষ্য, জ্বালানি তেল, ভোজ্যতেলসহ অনেক পণ্য কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রায় বাংলাদেশকে আমদানি করতে হয়। এসব পণ্য এভাবে পাচার হওয়ায় জাতীয় স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর বিনিময়ে চোরাপথে আসছে ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক ও আগ্নেয়াস্ত্র-গোলাবারুদ। এটি দেশের জন্য অনেক বড় ক্ষতিক্ষর দিক। এসব থেকে উত্তরণে যেকোনো মূল্যে চোরাচালান বন্ধ করা আবশ্যক।
জানাগেছে, গেল ৭ মার্চ হোয়াইক্যংয়ের উনচিপ্রাং থেকে মায়ানমারে পাচারের সময় ৯৫ কার্টুন বিভিন্ন প্রকারের কোমল পানীয়, ৩৮ কার্টুন বিভিন্ন প্রকারে জুস, ১০ কার্টুন তরল দুধ এবং ৩০ কেজি ওজনের দুই বস্তা মুড়ি ও চোরাইপণ্য পরিবহণ কাজে ব্যবহৃত দুইটি গাড়ি জব্দ করা করা হয়। এসময় নুরুল কবিরের ছেলে গাড়ি চালক গিয়াস উদ্দিন (৪০) এবং একই এলাকার নুরুল হাসানের ছেলে ড্রাইভার মোহাম্মদ হোছন (৩৪)কে আটক করা হয়। চোরা কারবারে জড়িত থাকার অভিযোগে পলাতক আরো তিনজনসহ ৫ জনের নামে টেকনাফ থানায় মামলা দায়ের করা হয়।
এরআগে দুটি অভিযানে ৮০ বস্তা চিনি, ২০ বস্তা মসুর ডাল, ৩০ বস্তা চাল, এক হাজার ৩০০ লিটার তেলসহ অন্যান্য পণ্য উদ্ধার করে পুলিশ। অভিযানে উদ্ধারকৃত পণ্য পাচারের তুলনায় সিকিভাগও নয় বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
হ্নীলা আল ফালাহ একাডেমির পরিচালনা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক জহির আহমদ বলেন,পাচাররোধে বিজিবিসহ সীমান্ত রক্ষী বাহিনীকে এবিষয়ে জিরো ট্রলারেন্স নীতি অবলম্বন করা উচিত। পাশাপাশি গোয়েন্দা কার্যক্রমের মাধ্যমে পাচার কাজে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি করা জরুরি। এতে পাচার বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
টেকনাফ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন,এটা যেহেতু সীমান্তের বিষয়, এ ব্যাপারে আমি বিজিবিকে অবহিত করবো।