মধ্যরাতে হ্নীলা দারুসসুন্নাহ মাদ্রাসায় ছাত্রবিক্ষোভ, মুহতামিমের পলায়ন

নিজস্ব সংবাদদাতা:
কক্সবাজার জেলার সর্ববৃহৎ ও প্রাচীন ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হ্নীলা জামেয়া দারুসসুন্নাহ মাদ্রাসায় ফের ছাত্র বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। এতে ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে মুহতামিম মাও. আবছার উদ্দিন চৌধুরী পালিয়ে যায় বলে জানান আন্দোলনরী ছাত্ররা।
অবশ্যই মুহতামিমের পলায়নের একটি ভিডিও সোস্যাল মিডিয়ায় ইতিমধ্যে ভাইরাল হতে দেখা যায়।

৪ নভেম্বর ভোররাতে এ ছাত্রবিদ্রোহের ঘটনা ঘটে।

আন্দোলনকারী ছাত্ররা জানান, দীর্ঘদিন ধরে মাদ্রাসার ছাত্ররা মুহতামিমরে অনিয়ম, দূর্নীতি, স্বেচ্ছাচারীতা ও স্বজনপ্রীতির প্রতিবাদে মুহতামিম মাও. আবছারের পদত্যাগ দাবি করে আসছিল। কিন্তু গত আওয়ামী সরকারের আমলে সৈরচারের দোসর এমপি বদির ভাই মাও. মুজিবকে দিয়ে প্রশাসন দিয়ে হুমকির মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের কন্ঠরোধ করা হত।

৫ই আগস্ট বৈষম্য বিরুধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে হাসিনা সরকারের পতনের পর মাদ্রাসার আন্দোলনকারী ছাত্ররা নতুনভাবে সংগঠিত হয় এবং গত ১৯/১০/২৪ সুরার বৈঠকে “সুরা” সভাপতি মাওলানা ওবায়দুল্লাহ হামজাহ বরাবর লিখিত দাবি পেশ করে। এসময় মাদ্রাসার প্রতিবেশী লোকজনও সুরা সভাপতির সাথে দেখা করে মাওলানা আবছারের নানা দূর্নীতির কথা তুলে ধরে। সভাপতি সুরা সদস্য মাও. ফরিদুল আলম ও মাহাবুব সওদাগরকে নিয়ে ২ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে একমাসের ভিতর তদন্ত সাপেক্ষে পদক্ষেপ নিবেন বলে ছাত্র ও মাদ্রাসার প্রতিবেশীদের আস্বস্থ করেন। পরে খবর পেয়ে টেকনাফ থানার ওসি মহোদয় ঘটনাস্থলে এসে তদন্ত চলাকালীন ছাত্রদে শান্ত থাকার আহবান জানান।

এদিকে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পেশ করার পূর্বে মাওলানা আবছারের পালিত ছাত্র নামধারী কিছু ক্যাডার অভিযোগ তুলে নিতে আন্দোলনকারী ছাত্রদের চাপ প্রয়োগ করলে ছাত্রাদের মধ্যে ক্ষোভ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। উত্তেজনার একপর্যাযয সর্বশেষ ৩ নভেম্বর দিবাগত রাতে আন্দোলনকারী ছাত্রদের ওপর মুহতামিমের ক্যডাররা দা-কিরিচ নিয়ে হামলা চালায়। এতে আনদোলনে নেতৃত্বদানকারী জমাতে ওলার ছাত্র রিয়াজ উদ্দিন গুরুতর আহত হলে আন্দোলনকারী ও সাধারণ ছাত্ররা সংগঠিত হয়ে তাদের প্রতিরোধ করে মুহতামিমের পদত্যাগের ১ দফা দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকে এবং মাদ্রাসার দফতরে তারা ঝুলিয়ে দেয়। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে মুহতামিম ছাত্রদের তোপের মুখে পালিয়ে যায়।

সকালে খবর পেয়ে টেকনাফ মডেল থানার এসআই মোখলেসুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম মাদ্রাসায় আসলে আন্দোলনকারী ছাত্র ও মাদ্রাসার প্রতীবেশীদের সাথে দীর্ঘ বৈঠকের পর সবাইকে শান্ত থাকার আহবান জানান এবং উদ্ভুদ্ধ পরিস্থিতিতে মাদ্রাসার স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু রাখার স্বার্থে আন্দোলনকারী ছাত্র ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সম্মতিতে মাদ্রাসার ছদরে মুহতামিম ক্বারী মোক্তার আহমদকে অস্থায়ী মুহতামিম মাও. এনামুল হক মন্জুরকে নায়েবে মুহতামিম হিসাবে মনোনীত করা হয়।
এসআই মোখলেসুর রহমান জানান, বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়ার এখতিয়ার আমার নেই। ওসি মহোদয়ের নির্দেশে আমরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে এসেছি। ছাত্রদের দাবি সমুহ শুনেছি। তাদের শান্ত থাকার আহবান জানানো হয়েছে। ছাত্ররা মাদ্রাসার কার্যক্রম স্বভাবিক রাখার জন ৫ সদস্যের একটি পরিচালনা পরিষদের ঘোষণা করে। পরবর্তীতে মাদ্রাসার সুরা, ছাত্রবৃন্দ ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ নিয়ে স্থায়ী মামাধানের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

টেকনাফ মডেল থানার ওসি গিয়াস উদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে আইন শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে ফোর্স পাঠিয়েছি। খবর পেয়েছি পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। মাদ্রাসা ছাত্র ও স্থানীয় লোকদের দাবি ও পরামর্শে মাদ্রাসার কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে অস্থায়ী ভিত্তিতে ছদরে মুহতামিম মাও কারী মোকতার আহমদকে মুহতামিমের দায়িত্ব পালনের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। পরবর্তীতে সুরা কমিটির বৈঠকে বিষয়টি দ্রুত সামাধানের পদক্ষেপ নিতে সকলের নিকট আহবান জানানো হয়।

এ ব্যাপারে জানতে মাও. আবছারের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।

এদিকে পরবর্তীতে সোস্যার মিডিয়ায় আন্দোলনকারী ছাত্ররা লিখিত দাবি সম্মিলিত একটি বক্তব্য পাঠ করতে দেখা যায়। যাতে দেখা যায় ছাত্ররা মাদ্রাসার সুরা সদস্য মাও ক্বারী ফরিদুল আলম বরাবর তাদের দাবি পেশ করতে দেখা যায়। যেখানে সুরা কমিটির পরবর্তী বৈঠক পর্যন্ত মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখতে ছদরে মুহতামিম মাও ক্বারী মোক্তারকে মুহতামিম করে ৫ সদস্যের একটি পরিচালনা পরিষদকে দায়িত্ব পরিচালনার আহবান জানানো হয়।

উল্লেখ্য যে, ইতিপূর্বে ছাত্রদের বিক্ষোভের মুখে মাওলানা আবছার মাদ্রাসা থেকে ২ বার অপসারিত হন। পরবর্তীতে তৎকালীন সুরা বরাবর লিখিত মুচলেকা দিয়ে তাকে পূনর্বহাল করা হয় বলে জানান আন্দোলনকারি ছাত্র ও স্থানীয়রা।