
সাইফুদ্দীন আল মোবারক, টেকনাফ:
সারা দেশের মতো কক্সবাজারের টেকনাফেও ছাত্রদের নেতৃত্বে চলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তাদের সঙ্গে যোগ দেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। আন্দোলনে যোগ দেয়া লোকদের লাঠিপেটা এবং তাদের আটক করে টাকা আদায় করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে এএসআই মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে।
দীর্ঘদিন ধরে টেকনাফ থানায় কর্মরত এএসআই মোশাররফ হোসেনের ভয়ে কেউ তখন মুখ খোলেনি। গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরও এএসআই মোশাররফ হোসেন সেখানে বহাল থাকায় হতাশ তার হাতে নির্যাতিত আন্দোলনকারীরা।
অভিযোগ উঠেছে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় স্টেশনের দোকানে বিএনপি-জামায়াতের কোনো লোকজন দেখলেই পেটাতেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। এমনকি বিএনপি-জামায়াতের লোকদের বসতে দিলে দোকান বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিতেন বলেও অভিযোগ করেন স্থানীয় দোকানদাররা।
পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এএসআই মোশাররফের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিল টেকনাফের সাধারণ মানুষ। তার ভয়ে বিএনপি-জামায়াতের অনেক নেতাকর্মী বাড়িছাড়া হয়ে পথেঘাটে নির্ঘুম রাত কাটান।
টেকনাফের স্থানীয় বাসিন্দা শিক্ষার্থী জিয়াউল ইলহাম জানান, ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেয়ার কারণে তাকে আটক করে নিয়ে যান মোশাররফ। সারা রাত আটকে রেখে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে ফজরের আগে আগে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। একই সঙ্গে হুমকি দেন আবার আন্দোলনে গেলে তার মা-বাবাকে গ্রেপ্তার করবেন মোশাররফ। এখন তিনি ভিন্ন রূপ ধারণ করে টেকনাফ থানায় বহাল ।
এভাবে অনেক আন্দোলনকারী ও বিএনপিসহ রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের কাছ থেকে মামলা দেওয়ার হুমকি দিয়ে টাকা আদায় করতেন বলে অভিযোগ মোশাররফের বিরুদ্ধে।
ওসামা নামে স্থানীয় এক দোকানদার বলেন, ‘প্রতিনিয়ত মোশাররফ দোকানে এসে হুমকি দিতেন। বিএনপির কোনো নেতাকর্মীকে দোকানে বসার সুযোগ দিলে দোকান বন্ধ করে দেবেন।’
টেকনাফ উপজেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক নুরুল হুদা ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন, কন্ট্রাকে মানুষের দোকান দখলসহ বাজারের এক চায়ের দোকানে ওপেন ঘুষ বাণিজ্যের হাট বসাতেন এবং ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন এএসআই মোশাররফ। এমনকি ৩ আগস্টেও তিনি আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার ওপর হামলার চেষ্টা চালান। তিনি কীভাবে এখনো বহাল থাকেন, এমন প্রশ্ন তোলেন ওই বিএনপি নেতা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী নারী বলেন, ‘প্রতিবেশী কিছু দুর্বৃত্তের হাতে মারধরের শিকার হয়ে টেকনাফ মডেল থানায় একটি অভিযোগ করেছিলাম গত ২১ সেপ্টেম্বর। সেই অভিযোগের তদন্তের দায়িত্ব পান এএসআই মোশাররফ। তিনি কিছু খরচ নিয়েছেন। এক মাস পেরিয়ে গেলেও রহস্যজনক কারণে কোনো ব্যবস্থা নেননি তিনি।’
ছাত্র-জনতার ওপর হামলাকারী এএসআই মোশাররফ হোসেনকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান টেকনাফের ভুক্তভোগীরা।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে এএসআই মোশাররফ হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো সত্য নয়।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘অফিসার নাই তো আস্তে আস্তে চেইঞ্জ করছি। আর তার বহাল থাকাটা তো উপরের কর্তৃপক্ষ জানে, আমার তো আর বদলি করার ক্ষমতা নাই।’ তবে অভিযোগের বিষয়টি তার কানে গেছে বলেও জানান তিনি।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহর সরকারি মোবাইল ফোন নম্বরে একাধিকবার কল করলেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।
সুত্র: ঢাকা টাইমস