টেকনাফে বেপরোয়া অপহরণ বানিজ্য, একদিনে ফেরিওয়ালাসহ ২ জন অপহরণ

নুরুল হুদা,নাফটুডে২৪:
সীামান্ত জনপদ টেকনাফে থামছেনা অপহরণ বানিজ্য। কোনভাবেই লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হচ্ছে এ অপহরণ ও মুক্তিপণ বানিজ্যের।
১৩ অক্টোবর ভোর রাতে উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শীলখালি এলাকা থেকে স্থানীয় এক যুবক অপহরণের রেশ নাকাটতেই সন্ধায় হোয়াক্যং ইউপির সাত ঘরিয়া পড়া থেকে অপহরণের স্বীকার হয় এক ভাঙ্গারী ফেরিওয়ালা।

জানা যায়, শনিবার দিবাগত রাত ৩ টার দিকে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শিলখালী নিজ বাড়ি থেকে বেলাল উদ্দিন (৩২) নামের এক যুবককে অপহরণ করে পাহাড়ে নিয়ে গেছে সন্ত্রাসীরা। অপহৃতের পরিবারে ফোন করে মুক্তিপণ বাবদ ৫০ লাখ টাকা দাবি করা হচ্ছে। বিষয়টি প্রশাসনকে অবহিত করলে বেলালকে হত্যার হুমকিও দিচ্ছে সন্ত্রাসীরা।
বেলালের চাচাত ভাই এডভোকেট ফরিদ হোসেন এসব সত্য নিশ্চিত করেছেন।
অপহৃত বেলাল উদ্দিন (৩২) ওই এলাকার আলী আহমদের ছেলে।

এডভোকেট ফরিদ হোসেন জানিয়েছেন, বেলাল কক্সবাজার শহরের আদালত প্রাঙ্গনে ফটোকপির দোকান করে সংসার চালিয়ে আসছিল। প্রতি সপ্তাহে ছুটির দিনে নিজ গ্রামে বাড়িতে জমি জামা দেখতে গিয়েছিল। শনিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাকে পাহাড়ের দিকে নিয়ে যায়। রবিবার বিকেলের দিকে পরিবারের কাছে ফোন করে প্রথমে ৭০ লাখ টাকা পরে ৫০ লাখ টাকার মুক্তিপণ দাবি করেন। স্থানীয় প্রশাসন ও কাউকে এ বিষয়ে অবহিত করলে বেলালকে হত্যাকরে লাশ গুম করার হুমকিও দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, ফটোকপির দোকান করে সংসার চালানো বেলালের পরিবারের পক্ষে এতো টাকার মুক্তিপণ দেওয়া সম্ভব নয়।

বাহারছড়া ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হাফেজ আহমেদ বলেন, বেলালের বাবার মৃত্যুর পর থেকে তারা কক্সবাজার শহরে বসবাস করেছেন। শনিবার পৈত্রিক বাগানবাড়ি দেখতে এসেছিলেন। রাতে ঘুমাতে গেলে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা অস্ত্রেরমুখে জিম্মি করে পাহাড়ের দিকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এরপর রবিবার বিকেলে মুক্তিপণ হিসেবে প্রথমে ৭০লাখ পরে ৫০লাখ টাকা দাবি করছে।

অপরদিকে গতকার সন্ধ্যা ৬ টার দিকে হোয়াইক্যং ইউপির ৯ ওয়ার্ডের সাত ঘরিয়া পাড়া এলাকা থেকে অপহরণের স্বীকার হয় এক ভাঙ্গারী ফেরিওয়ালা। খবর পেয়ে হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির আইসি এস আই মাজহারুলের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম এবং ছাত্র জনতা ও এলাকাবাসী মিলে কম্বনীয়া পড়া পাহাড়ি এলাকায় অভিযান চালালেো অপহৃতকে উদ্ধার সম্ভব হয়নি।
তবে মধ্য রাতের দিকে ৩০ হাজার টাকা মুক্তিপণের বিনিময়ে তাকে ছেড়ে দেয়ার খবর পাওয়া গেলেও কোন নির্বরযোগ্য সুত্রে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন প্রতক্ষদর্শী জানান, মোঃ শরীফের পুত্র মোঃ রিদুয়ান, আব্দুস সালাম প্রকাশ বাইট্টাইয়ার পুত্র মোঃ রফিক, মৃত মেহের আলীর পুত্র মোঃ ইয়াসিন, আব্দুর রহিম মিস্ত্রির পুত্র মোঃ রাইহান সাত ঘরিয়া পাড়া এলাকায় ভাঙ্গারী ফেরি কালে আকষ্মিক এসে টেনে হিছড়ে পশ্চিমের পাহাড়ের দিকে নিয়ে যায়।
জনশ্রুতি রয়েছে মোঃ রফিক কুখ্যাত আব্দুল হাকিম ডাকাতের সহযোগী ছিল এবং অপহরণকারীরা এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী হওয়ায় ভয়ে কেউ তাদের বিরুদ্ধে সরাসরি মুখ খুলতে সাহস পায়না।

এব্যাপারে টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন জানান, বিষয়টি ইতিমধ্যে পুলিশ অবহিত হয়েছে। এব্যাপারে পুলিশ অপহৃতকে উদ্ধারে অভিযান শুরু করেছে।

কক্সবাজার জেলা পুলিশ ও ভুক্তভোগীদের তথ্য বলছে, গত একবছরে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৩২ জনের অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে ৭৭জন স্থানীয় বাসিন্দা, ৫৪ জন রোহিঙ্গা নাগরিক। অপহরণের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ৬৭ জন মুক্তিপণ আদায় করে ছাড়া পেয়েছেন বলে ভুক্তভোগীদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে।