কারও ওজন যদি হয় ৬০ কেজি, তাহলে দিনে তিনি ৬০ গ্রামের মতো প্রোটিন গ্রহণ করতে পারবেন। তবে কিডনি রোগসহ বিশেষ বিশেষ রোগ থাকলে অন্য কথা। আবার মেয়েদের মাসিক ও গর্ভাবস্থায় এই প্রোটিনের চাহিদা প্রায় দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।
প্রতি ১০০ গ্রাম লাল মাংসে প্রায় ২৩ গ্রাম প্রোটিন ও ২.৫ গ্রাম ফ্যাট থাকে। সেই হিসাবে ওই ব্যক্তির প্রতিদিন ২৬০ গ্রামের মতো লাল মাংস খাওয়ায় কোনো বাধা থাকার কথা নয়। কিন্তু প্রোটিনের অন্য সব উৎস বাদ দিয়ে প্রতিদিন তিনি যদি শুধু ২৬০ গ্রাম লাল মাংস খান, তাহলে এটি তাঁর জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করবে।
প্রতিদিন ১০০ গ্রামের বেশি লাল মাংস খেলে হৃদ্রোগে মৃত্যুর আশঙ্কা ১৫ শতাংশ, স্ট্রোকের ঝুঁকি ১১ শতাংশ, বৃহদন্ত্র ও প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি ১৭ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। অতিরিক্ত লাল মাংস কোষ্ঠকাঠিন্য ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাও তৈরি করে। লাল মাংস থাকা বিশেষ ইনফ্ল্যামেটরি যৌগ পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদন্ত্র ক্যানসারের জন্যও দায়ী। এ ছাড়া ফুসফুসের নানা রোগ, কোলন ও স্তন ক্যানসারে ভূমিকা রাখে লাল মাংস। এমনকি অতিরিক্ত লাল মাংস আর্থ্রাইটিস, গেঁটে বাত, পেপটিক আলসার, পিত্তথলিতে পাথর, অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ, কিডনি রোগসহ বিভিন্ন জটিলতা তৈরি করে।
টাটকা লাল মাংসের চেয়ে প্রক্রিয়াজাত লাল মাংস আরও বেশি ক্ষতিকারক। দৈনিক ৫০ গ্রামের বেশি প্রক্রিয়াজাত মাংস গ্রহণ হৃদ্রোগের ঝুঁকি ৪২ শতাংশ ও ক্যানসারের ঝুঁকি ৬৩ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়।
প্রাপ্তবয়স্ক কারোরই দিনে ৭০ গ্রামের বেশি রান্না করা মাংস খাওয়া উচিত নয়। আমরা যেভাবে মাংস কেটে থাকি, সেখানে একটি বড় টুকরাতে থাকে প্রায় ২০ গ্রাম মাংস। গরুর মাংস খাওয়ার নিরাপদ মাত্রা হলো সপ্তাহে দুই দিন বা সপ্তাহে মোট তিন থেকে পাঁচ বেলা। প্রতি বেলায় ঘরে রান্না করা মাংস ১৫-২৫ গ্রাম বা দুই বা তিন টুকরার বেশি খাবেন না।
১ থেকে ৪ বছর পর্যন্ত শিশুদের দৈনিক ১-২ আউন্সের মতো মাংস খাওয়ানো যাবে। এভাবে সপ্তাহে দুই বা তিন দিন।
৫ থেকে ১৮ বছর চাহিদা অনুযায়ী ৩-৪ আউন্স পর্যন্ত দেওয়া যাবে। এভাবে সপ্তাহে দুই বা তিন দিন। তবে ঈদে শিশুরা যেহেতু ইচ্ছেমতো মাংস খেয়ে থাকে, তাই অভিভাবকদের খেয়াল রাখতে হবে, যেন সারা দিনের খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত শাকসবজি, ফলমূল ও পানি থাকে। না হলে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
গর্ভাবস্থায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় ত্রৈমাসিকে দৈনিক ৭০ থেকে ৮৫ গ্রাম পর্যন্ত গ্রহণ করা যাবে। এভাবে সপ্তাহে তিন বা চার দিন।
কিডনিজনিত জটিলতা, ইউরিক অ্যাসিডের আধিক্যসহ বিভিন্ন জটিল দীর্ঘমেয়াদি রোগের ক্ষেত্রে অবশ্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তারপর মাংস গ্রহণ করা উচিত।
নিয়ম মেনে মাংস গ্রহণ ও সঠিক উপায়ে রান্না করলে অনেক জটিলতা থেকে মুক্ত থাকা যায়। চলুন, কিছু উপায় জেনে নিই—